Macro Photography part- 02 – ম্যাক্রো ফটোগ্রাফি পর্ব -০২ 1

প্রথম পর্বে আমরা আলোচনা করেছি ম্যাক্রোফটোগ্রাফি কি এবং ম্যাক্রোগ্রাফি করতে কি কি বেসিক ইকুইপমেন্ট প্রয়োজন হতে পারে তা নিয়ে। আজ Macro Photography দ্বিতীয় পর্বে আমরা আলোচনা করব আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় সেলফোন দিয়ে কিভাবে ম্যাক্রোগ্রাফি করা যায়। তবে তার আগে সামগ্রিক সেলফোন ফটোগ্রাফি নিয়ে কিছু কথা শেয়ার করে নিই।

সেলফোন হল একটি মাল্টিফাংশনাল যন্ত্র, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকায় যার অবস্থান এখন সবার উপরে। সেলফোনের হাজারো প্রয়োজনীয় ব্যবহারের মধ্যে ক্যামেরা ফিচারটা অন্যতম। বেশিরভাগ মানুষ সেলফোনের ক্যামেরা শুধুই সেলফি অথবা ফ্রেন্ডস এন্ড ফেমিলির ছবি তোলার জন্য ব্যবহার করে থাকেলেও কিছু লোক সেলফোনে ক্যামেরা ব্যবহারের সাধারণ গন্ডী পেরিয়ে এর সর্বোত্তম ব্যবহার করতে শিখে গেছে। আজ বিশ্বব্যাপি সেলফোন ভার্সেটাইল ক্যামেরা ডিভাইস হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। অনেকের সেলফোনে তোলা স্ট্রিট, লাইফস্টাইল, ল্যান্ডস্কেপ কিংবা ম্যাক্রোফটোগ্রাফ একদম তাক লাগানোর মত। অনেকেই সেলফোন ফটোগ্রাফিকে নিয়ে গেছে প্রোফেশনাল লেভেলে। Joy Marie এমন একজন ফটোগ্রাফার যিনি সেলফোন দিয়ে ওয়েডিং ফটোগ্রাফি করে সারা বিশ্বে বেশ সাড়া জাগিয়েছেন। পর্তুগালের Nuno Perestrelo মোবাইল ফোন দিয়ে স্ট্রিটে সনি এওয়ার্ড পেয়েছেন। ম্যাক্রোফটোগ্রাফি বরাবরের মতই চ্যালেঞ্জিং একটি সেক্টর, তবে ম্যাক্রোতেও সেলফোন ফটগ্রাফাররা অসাধারণ সৃজনশীলতা দেখিয়েছেন। তাঁদেরই একজন  Okqy Purnama Setiawan, যিনি সেলফোনে ম্যাক্রো করে আজ সারা বিশ্বে সমাদৃত। আমাদের দেশেও এমন উদাহরণ কম নেই।

যাইহোক, এখন আসা যাক কিভাবে সেলফোনে ম্যাক্রোগ্রাফি করা সম্ভব, সেলফোনে ম্যাক্রোগ্রাফি করতে চাইলে কি কি ইকুইপমেন্ট প্রয়োজন, সেলফোন তো অনেক ধরনের, কিভাবে বুঝবো কোনটার ক্যামেরা ম্যাক্রোর জন্য  উপযোগী আর কোনটি নয় ইত্যাদি নিয়ে আলোচনায়। প্রথমেই আসা যাক ইকুয়েপমেন্ট এর প্রসঙ্গে…

সেলফোন ম্যাক্রো ইকুইপমেন্ট সমূহঃ

১. সেলফোনঃ

ক্যামেরা বিশিষ্ট একটি সেলফোন যার Aperture Value ২.৮ বা তার কম। এপেরচার মানসংখ্যা যত কম হবে সাবজেক্টের তত ক্লোজ সট নেওয়া যাবে এবং তত শার্প ছবি পাওয়া যাবে। বর্তমান বাজারে পাওয়া যায় এমন যে কোন স্মার্টফোনের ক্যামেরা ২.৮ বা তার কম এপেরচার মানসংখ্যা সম্পন্ন। তবে সবথেকে ভাল হবে যদি ২.০ বা তার কম এপেরচার মানসংখ্যা বিশিষ্ট সেলফোন ব্যাবহার করা যায়। ফোনের স্পেসিফিকেশন অথবা ক্যাপচার করা ছবির ডিটেইলস থেকে এপেরচার মান জানা যেতে পারে। স্মার্টফোন ছাড়াও যে কোন ক্যামেরাওয়ালা সেলফোন দিয়েও ম্যাক্রো করা সম্ভব তবে সেক্ষেত্রে এক্সট্রিম ম্যাক্রো করা নাও যেতে পারে। ম্যানুয়াল ফোকাস সুবিধা থাকলে অনেক সুবিধা হবে ফোকাস এডজাস্ট করতে, যদি না থাকে তবে অন্তত অটোফোকাস অপশন থাকাটা জরুরি। অনেকেই প্রশ্ন করে আমার ক্যামেরা তো ৫ মেগাপিক্সেল, আমি কি ৮ মেগাপিক্সেলের মতো ছবি পাবো? তাদের বলি, আসলে মেগাপিক্সেল কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। কিছু ফোনের ২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরাও অনেক ফোনের ১৩ মেগাপিক্সেল অপেক্ষা ভাল ছবি দেয়। মেগাপিক্সেলের তুলনায় সেন্সরের উপর ছবির কোয়ালিটি বেশি নির্ভর করে। যে কোন ভাল ব্রান্ডের সেলফোনের ক্যামেরাতে ভাল মানের সেন্সর লাগানো থাকে। তবে যাদের বাজেট কম তারা শাওমি, ওয়াল্টন, সিম্ফনি, ওকাপিয়া কিংবা মাইক্রোম্যাক্সের মত চায়না ব্রান্ডের সেলফোন ব্যবহার করতে পারেন।

2. থার্ড পার্টি লেন্সঃ 

শুধু সেলফোন দিয়ে যথেষ্ট ক্লোজআপ পাওয়া গেলেও ম্যাক্রো লেভেলে ডিটেইল পাওয়া সম্ভব হবেনা। এজন্য দরকার অতিরিক্ত লেন্স। মোবাইলের জন্য ম্যাক্রো লেন্স বাড়িতে নিজেও বানাতে পারবেন আবার বাজারেও বিভিন্ন মানের ম্যাক্রো লেন্স বিক্রি হচ্ছে। নিজে নিজে বানানো লেন্সগুলোকে বলা হয় “Home Made Lens” আর বাজারে পাওয়া লেন্সগুলোকে সাধারনত বলা হয় Universal Lens. পুরাতন ক্যামেরার লেন্স থেকে গ্লাস বের করে, বাজারে প্রাপ্ত ম্যাগনিফাইয়িং গ্লাস ব্যবহার করে, চশমার গ্লাস ব্যবহার করে, লেজার লাইটের লেন্স দিয়ে, ডোর ভিউয়ার ইত্যাদি অনেক কিছু ব্যাবহার করেই আপনি বাসায় বসে সহজেই মোবাইলের জন্য ভাল লেন্স বানাতে পারবেন। ম্যাগনিফাইয়িং গ্লাস ব্যবহার করেও ম্যাক্রো ফটোগ্রাফি করা যায়। ফলাফল খুব ভাল না হলেও মন্দ বলা যাবেনা। তবে পুরাতন ক্যামেরার লেন্স ভেঙে ভেতর থেকে গ্লাস বের করে ম্যাক্রো লেন্স তৈরি করলে বেশ ভাল মানের ম্যাক্রো ছবি পাওয়া যায়।নিচে হোম মেড ম্যাক্রোলেন্স এর ছবি দেওয়া হলঃ

Home made macro lens
Home made macro lens

 

Home Made লেন্সগুলি সাশ্রয়ী ও উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন হলেও সহজে খোলা মেলা করা যায়না। তাছাড়া সবার পক্ষে বাড়িতে লেন্স বানানোও সম্ভব নয়। বর্তমানে দেশি বাজারে সেলফোনের জন্যে দুই ধরনের ম্যাক্রো লেন্স কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। একটি 10X ও আরেকটি 20X যেখানে X দিয়ে আসলে ম্যাগনিফিকেশন পাওয়ার বোঝাচ্ছে। 10x ম্যাক্রো লেন্সটি বাজারে Universal 3 in 1 প্যাক হিসেবে আরো দুটি লেন্সের (Wide, Fisheye) সাথে আসে। বাকী দুটি লেন্স তেমন কোন কাজের না হলেও 10X ম্যাক্রোটি বেশ দারুন কাজ করে। আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রায় ৮ মাস যাবত 10X ম্যাক্রো লেন্সটি ব্যাবহার করছি। এর ফলাফলে আমি অনেক সন্তুষ্ট। 20X লেন্সটিতে 10X এর ন্যায় একটি গ্লাসের বদলে ৩ টি গ্লাসের লেয়ার থাকে। যদিও 20X ম্যাক্রো লেন্সে 10X অপেক্ষা দ্বিগুন ম্যাগিনিফিকেশন পাওয়ার কথা তবে আমি পরীক্ষা করে দেখেছি এটি আসলে 10X এর খুব কাছাকাছি রেজাল্ট দেয়। উপরন্তু 10X ম্যাক্রো লেন্স নিয়ে আপনাকে সাবজেক্টের ১ ইঞ্চ কাছে যেতে হলে 20X এর ক্ষেত্রে অন্তত ০.৮ ইঞ্চ কাছে যেতে হবে যা ম্যাক্রোতে অনেক বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। তবে 10X এর তুলনায় 20X এর কর্নার সার্পনেস ভাল। বিগিনার হিসেবে যে কারো 10X দিয়েই শুরু করা উচিত বলে আমি মনে করি। লেন্স নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা আমাদের পরবর্তি পর্বে ও ভিডিও টিউটোরিয়ালে থাকছে।

3. থার্ড পার্টি লাইট সোর্সঃ ম্যাক্রোগ্রাফির প্রতিবন্ধক সমূহের মধ্যে লো-লাইট একটি। যত বেশি লাইট পাওয়া যাবে ম্যাক্রোতে তত ভাল রেজাল্টও পাওয়া যাবে। এটা সেলফোন ম্যাক্রো ও কনভেনশনাল ম্যাক্রোগ্রাফি দুটোর জন্যেই সমানভাবে প্রযোয্য। সেলফোনে লো লাইটে সাটার স্পিড মাত্রাতিরিক্ত স্লো হয়ে যায় যার ফলে সাবজেক্টের সামান্য নড়াচড়াও বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে। এই সমস্যা এড়ানোর জন্যে সেলফোনে ম্যাক্রো করার সময় অতিরিক্ত লাইট সোর্স হিসেবে সাধারণ টর্টগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। আমি এজন্য এটাকে থার্ড পার্টি বলছি কারন বেশিরভাগ ক্যামেরাওয়ালা সেলফোনে বিল্টইন একটা ফ্লাস লাইট দেওয়াই থাকে। সমস্যা হল বেশিরভাগ সেলফোনে ফ্লাস লাইটটা ক্যামেরার খুব নিকটে থাকে, এবং লেন্স লাগানোর পর তা লেন্সের নিচেই ঢাকা পড়ে। তাই চাইলেও আপনি সেলফোনের বিল্টইন ফ্লাস ব্যবহার করতে পারবেন না। টর্চ ব্যবহার করলে ছবিতে সাবজেক্টের শাইনিং পয়েন্টগুলো বার্ন হয়ে যেতে পারে। এটি এড়ানোর জন্যে টর্চের উপর সাধারণ টিস্যু পেপার বা পাতলা সাদা কাগজ লাগালে সেটা ডিফিউজার এর ন্যায় কাজ করবে।

সেলফোন ম্যাক্রো নিয়ে অতীব প্রয়োজনীয় কিছু প্রশ্নের উত্তর ও বিস্তারিত আলোচনা থাকছে আগামি পর্বে।

One Comment

  1. অসাধারন ধারনা দিলেন ভাই, আমি যা খুজছিলাম। তা এখানে পেয়ে গেলাম।

Leave a Reply

Home
Hot Deals
Account
0
Cart